সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা: ৩১ জানুয়ারির পর বন্ধ পর্যটন

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ জানুয়ারির পর এই দ্বীপে কোনো পর্যটক প্রবেশ করতে পারবে না। যদিও দ্বীপের বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা আরও এক মাস সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি।সেন্টমার্টিন

কেন এই নিষেধাজ্ঞা?

সেন্টমার্টিন দ্বীপ তার স্বচ্ছ নীল জলরাশি, প্রবালপ্রাচীর এবং অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। তবে অতিরিক্ত পর্যটকসমাগম এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবসা দ্বীপের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এবং অতিরিক্ত জনসমাগমের কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত ঝুঁকি কমাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগে থেকেই পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

পর্যটন মৌসুমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:

সাধারণত, প্রতিবছর ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটকরা সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে পারেন। তবে এবার সরকার পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

নভেম্বর ২০২৪: পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারলেও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়।

ডিসেম্বর ও জানুয়ারি ২০২৫: প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২,০০০ পর্যটকের যাতায়াত এবং রাত্রিযাপনের অনুমতি দেওয়া হয়।

ফেব্রুয়ারি ২০২৫: পর্যটকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, যথাসময়ে জাহাজ চলাচলের অনুমতি না পাওয়ায় নভেম্বরেও পর্যটকরা যেতে পারেননি। পরে ডিসেম্বর থেকে ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে পর্যটকদের ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়।

নিষেধাজ্ঞার ফলে স্থানীয়দের অবস্থা:

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের সাড়ে ১০ হাজার মানুষের জীবিকা পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল। পর্যটন মৌসুমে তারা ব্যবসা করে সারাবছর সংসার চালান। যদি পর্যটন নিষেধাজ্ঞা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিথিল করা হতো, তাহলে স্থানীয়রা উপকৃত হতেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটকদের আনাগোনা কমে গেলে দ্বীপের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। হোটেল-মোটেল, খাবারের দোকান, ট্রলার মালিক এবং অন্যান্য পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

প্রশাসনের বক্তব্য:

কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, “৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলো চলাচল করতে পারবে। এরপর আর পর্যটকবাহী জাহাজ চলতে দেওয়া হবে না। তবে, সরকার যদি নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সেন্টমার্টিনের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকা। ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে ১০ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। প্রবাল, সামুদ্রিক কচ্ছপ, বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী ও বিরল পাখির আবাসস্থল হিসেবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সরকার সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—পর্যটকদের সংখ্যা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা, দ্বীপে রাতযাপন সীমিত করা, প্লাস্টিক বর্জন করা এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা চালু করা।